Reading Time: 4 minutes
বই পড়ার নেশা আছে আমার। বই কেনারও নেশা আছ। এক সময় খুব গল্প উপন্যাস পড়তাম, এখন নন-ফিকশনে আগ্রহ বেশি। রূপকথা, দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা, নীহাররঞ্জন, ফাল্গুনী, আশুতোষ, নিমাই, বিমল মিত্র দিয়ে জীবন শুরু করেছিলাম। এরপর আরেকটু বড় হয়ে পড়ার ধরণ পালটেছে। লেখক বদলে গেছে। রুচির পরবির্তন হয়ছে। ভালো গল্প বা উপন্যাস হলে পড়তে আগ্রহী, তবে ভালো সেটা জানার পর।
নন-ফিকশনে আমার আগ্রহ রাজনীতি, ইতিহাস, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা, এসবই। বিশেষ আগ্রহ আছে রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে। স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশ নিয়েও আমি আরও বেশি পড়তে চাই। প্রতিটি সামরিক অভ্যুত্থান, এর কুশীলব, এসবের সাক্ষী-সবই আমার আগ্রহের বিষয়।
১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের বাক পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ঘটনার নাম। এরপরেরটি আমার বিবেচনায় ৯০ এর এরশাদ পতন এবং সবশেষ হচ্ছে ১/১১। এসব নিয়ে আমার পড়ার আগ্রহ বেশি। তবে আজকের এই লেখা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘিরে।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়টি নিয়ে আমি অনেক বেশি পড়তে চাই। পড়া শুরুর পরে এ সংক্রান্ত বইগুলো কেনাও শুরু করি। মাঝে মধ্যেই কিছু বইয়ের কিছু অংশ আবার পড়ি, বইগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা দেখি, শেলফ পরিস্কার করি। আমি বই সাজাই বিষয়বস্তু ধরে। যেমন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বইগুলো থাকে একসঙ্গে, আত্মজীবনী আরেক পাশে, উপন্যাস একপাশে, অর্থনীতি আলাদা সারিতে, এরকম।
আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। বই ঠিক করতে করতে ১৫ আগস্ট, এর আগের পরের ঘটনা নিয়ে লেখা বইগুলো আলাদা করলাম। যারা এ বিষয় নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্যই এই লেখাটি। আগেই বলে রাখি এ সংক্রান্ত গল্প বা উপন্যাস আমি তালিকায় রাখিনি।
১.
বঙ্গবন্ধু নিয়ে বই নিয়ে কথা বলার আগে তাঁর লেখা বইগুলোর কথাই বলা প্রয়োজন। বই তিনটিই অবশ্যপাঠ্য। অসমাপ্ত আত্মজীবনী যে কোনো ধরনের পাঠককেই মুগ্ধ করবে। লেখক শেখ মুজিবুর রহমান এখানে অনন্য।
২.
এই বইগুলো মূলত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিকথা, তার শাসনামলের মূল্যায়ন ও ঘটনার বর্ণনা-এসব নিয়ে। বাবাকে নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর লেখা যেমন আছে, তেমনি আছে অন্যদের স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু।
৩.
রাজনীতিক মওদুদ আহমদ নন, লেখক মওদুদ আমার বেশ পছন্দের। তার সবগুলা বইই ইতিহাসের পাঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এরই অংশ হিসেবে এই বইটি আগ্রহীরা পড়তে পারেন।
৪.
আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার বই। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নয়, তবে তাঁর শাসনামলের বেশ কিছু সময় এই বইটিতে পাওয়া যাবে। তবে উপসংহারে আসতে হবে পাঠককেই। কেননা, কেউ কেউ পরে আর বঙ্গবন্ধুর অনুসারী থাকেননি। ফলে তাদের মূল্যয়ন ভিন্ন ধরণেরই হবে।
৫.
বাংলাদেশের সবচেয়ে বিয়োগান্তক ঘটনার তারিখ ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। সেই দিনটিকে যারা কমবেশি কাছে থেকে দেখেছেন তাদের লেখা বই। প্রতিটি বইই গুরুত্বপুর্ণ। তবে মে. জে. মইনুল হোসেন চৌধুরীর ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক’ বইটি আমার সংগ্রহ থেকে কে নিয়ে গেল সেটি খুঁজছি।
আরেকটি বইয়ের কথা বলি। ভারতীয় এক কূটনীতিকের লেখা, যাকে প্রেসিডেন্ট জিয়া বহিস্কার করেছিলেন। এটিও একটি আগ্রহ জাগানোর একটি বই।
৬.
প্রত্যক্ষ সাক্ষী নন, বা কাছে থেকেও দেখেননি। কিন্তু ৭৫ এর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করেছেন, গবেষণা করেছেন বা মূল্যায়ন করেছেন তাদের লেখা বই।
৭.
৭৫ এর আগে বা পরের নানা বিষয় নিয়ে লেখা বই। সময়টা বুঝতে হলে এ বইগুলোও পড়া প্রয়োজন।
৮.
১৯৭৫কে জানতে বা বুঝতে হলে জাসদ অধ্যায় জানতেই হবে। এ বইগুলো জাসদ নিয়েই।
৯.
ইতিহাস ও রাজনীতির মনোযোগী পাঠক হিসেবে এই বইগুলোও পড়া কিন্তু দরকার। জাসদ ছাড়াও সিরাজ সিকদার সে সময় মাথাব্যথার যথেষ্ট কারণ হয়েছিলেন। মওলানা ভাসানীর ভূমিকা নিয়েও আছে নানা জনের নানা মূল্যায়ন। বদরুদ্দীন উমরের এই লেখাগুলো সে সময়েরই লেখা। সবার ওপরের বইটির প্রচ্ছদ দেখা যাচ্ছে না। তাই আলাদা করে দিচ্ছি।
কঠোর সমর্থকদের এই বই হয়তো ভালো লাগবে না। পাঠক পড়বেন, মূল্যায়নই তাদেরই।
এর বাইরেও এ বিষয়ে অনেক বই আছে। আমার জানা ও পড়ার বাইরের সে সব বইয়ের নাম ও সন্ধান দিলে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
Comments
চমৎকার এবং ঈর্ষনীয় সংগ্রহ। এই সমৃদ্ধ সংগ্রহ তালিকায় আমার নিজের লেখা একটি বই দেখে পুলকিত হলাম। এখানকার বেশিরভাগ বইই আছে আমার, পড়াও। কয়েকটা পড়া হয়নি, সংগ্রহেও নেই। আগ্রহ তৈরি হলো। অনেক ধন্যবাদ এই সংগ্রহটির সচিত্র বিবরণ দেওয়ার জন্য। যারা এই সময়কাল নিয়ে জানতে আগ্রহী, এই বইগুলো পড়লে অনেকটাই জানতে পারবে।
ভালো লেখক হওয়ার আগে উৎকৃষ্ট পাঠক হতে হয়, সেটাই আপনার এ উপস্থাপনা থেকে শিখলাম। একটা সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে পড়ালেখার পরিকল্পনা কীভাবে করতে হয় সেটাও বোঝা গেছে। আপনার সংবাদ, মতামত, সার্বিক রচনার ভক্ত আমি। ভালোবাসা জানাই। দোয়া করি, এমনই প্রানবন্ত আর সক্রিয় থাকুন।
Author
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
Author
আমার পড়া বা সংগ্রহে নেই, আপনার জানা আছে, এমন বইয়ের নাম চাই কিন্তু