Reading Time: 3 minutes
১.
একজন নেতা তার ভক্ত অনুসারীদের সামনে বক্তৃতা দিতে উঠেছেন। তিনি শুরু করলেন, ‘আমি আজও সেই দিনের কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হই, সেই দিনটি ফিরে পেতে ক্ষণে ক্ষণে কামনা করি, যখন আমি একজন নারীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে সুখের আশ্রয় লাভ করেছিলাম। তবে সেই নারী আমার স্ত্রী ছিল না……’। বক্তা কিছুক্ষণ নীরব হলেন।
শ্রোতারা তো স্তম্ভিত! এই তাদের প্রিয় নেতা, এত তার অধঃপতন!! শুরু হলো ফিসফিসানি!
দুই মিনিট নীরবতার পর তিনি বললেন, ‘সেই নারী ছিলেন আমার মা……. . ’
এবার জনতা হাফ ছেড়ে বাঁচল। তাদের বুক থেকে যেন বোঝার পাহাড় নেমে গেল।
জনতার মধ্যে একজন ভাবলেন এমন চমৎকার ভাবে মা কে উপস্থাপন করা যায়, তিনি তো জানতেন না। মা-এর কথা ভেবে তার চোখে পানি চলে আসল। ভাবল তিনিও তার মাকে এভাবে উপস্থাপন করবেন, আজই……।
রাতে বাসায় ফিরে তিনি তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন,
ডার্লিং, শোন…আমি আজও সেই দিনের কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হই, সেই দিনটি ফিরে পেতে ক্ষণে ক্ষণে কামনা করি, যখন আমি একজন নারীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে সুখের আশ্রয় লাভ করেছিলাম। তবে সেই নারী কিন্তু তুমি নয়………. .
স্ত্রী অগ্নিমূর্তি ধারণ করলে তিনি একটু ঘাবড়ে গেলেন…কিছুক্ষণ আমতা-আমতা করে বললেন
“সেই নারী কে ছিল আমি মনে করতে পারছি না……”
এরপর ভদ্রলোকের জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি হাসপাতালে…শরীরে অসংখ্য ব্যান্ডেজ………
এই গল্পের শিক্ষা হচ্ছে, পেস্ট করতে না পারলে কপি না করাই ভালো।
এই গল্পের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তালিকার কপি পেস্টের কোনো সম্পর্ক সম্ভবত নেই।
২.
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ড. দিলীপ কুমার মিত্র-এর একটি বই আছে। নাম উদ্ধৃতি-অভিধান। ছোটবেলায় বাসায় দেখছি বাণী চিরন্তনী। সেরকমই একটি বই। পড়তে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা উদ্ধৃতিতে।
‘আমার অর্থমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কারণ অর্থমন্ত্রী হতে হলে যত কম লেখাপড়া জানা যায় তত ভালো। সেদিক থেকে আমি যোগ্য ছিলাম। কিন্তু আমার থেকেও কম লেখাপড়া জানা একজনকে পাওয়া গেল। তাকেই অর্থমন্ত্রী করা হলো।’
-রমানাথ রায়, মুখ্যমন্ত্রী, কর্ণাটক।
এই বাণীর সঙ্গেও কিন্তু আমাদের কোনো মন্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নাই। তবে কপি-পেস্টের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ উদ্ধৃতিটি পড়ে আমার রমানাথ রায় নিয়ে কৌতূহল হলো। যেহেতু গুগল সব জানে, তাই গুগলের শরণাপন্ন হলাম। কিন্তু অনেক খুঁজেও রমানাথ রায় নামে কর্ণাটকের কোনো মুখ্যমন্ত্রীকেই খুঁজে পেলাম না। তাহলে লেখক কোথা থেকে পেলেন? না কি এখানেও কপি-পেস্টের ঝামেলা?
৩.
মন্ত্রী প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন তারাপদ রায়ের সেই বিখ্যাত গল্পটা মনে পড়ে গেল। সংক্ষেপে গল্পটা এ রকম:
রাজার ছেলে ও ধোপার ছেলে এক সাথে লেখাপড়া করে। বড় হয়ে রাজার ছেলে রাজা হলো, আর ধোপার ছেলে ধোপা। ধোপা প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে গাধার পিঠে কাপড় নিয়ে রাজ প্রসাদে যায়, কেউ দেখার আগেই ফিরে আসে।
একদিন রাজা যাবে শিকারে। প্রধানমন্ত্রী জ্যোতিষীকে দিয়ে দিন গণনা করে ভালো একটা তারিখ বের করলেন। খুব ভোরে রওনা দিয়েছেন রাজা। সামনেই পড়ে গেল ধোপা। মন্ত্রীরা হায় হায় করে উঠলেন, ধোপার মুখ দেখা নাকি অপয়া। কিন্তু ছোটবেলার বন্ধু বলে কথা। রাজা কথা বললেন। শিকারে যাবে শুনে ধোপা মানা করল রাজাকে, দিনটা নাকি খারাপ। তেড়ে আসলের মন্ত্রী ও জ্যোতিষী। তাদের গণনায় দিনটা সবচেয়ে ভালো।
রাজা গেলেন শিকারে। মাঝপথে শুরু হলো ঝড়। কোনো রকম বেঁচে গেলেন রাজা। মন্ত্রীদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে গেলেন। ঢেকে আনলেন সেই ধোপাকে। জড়িয়ে ধরে বললেন, বন্ধু তুমি আমার মন্ত্রী হও। কারণ তুমিই ঠিক কথা বলেছিলে। ধোপা তখন বলল, রাজা মশাই, আমার একটা কথা আছে। সেটা হলো, প্রতিদিন ভোরে উঠে আমি আমার গাধার লেজের দিকে তাকাই। যখন দেখি লেজ নরম তখন বুঝি দিনটা ভালোই যাবে, ঝড় বৃষ্টি হবে না। কিন্তু সেদিন দেখলাম লেজটা শক্ত হয়ে আছে, তখনই বুঝেছিলাম দিনটা ভালো যাবে না। সুতরাং মন্ত্রী বানালে আমার গাধাটাকেই বানান।
এই গল্পের শিক্ষা হচ্ছে-সেই থেকে গাধারাই মন্ত্রী হচ্ছে।
৪.
নিতান্তই বানানো একটা গল্প। বরং আরেকটা গল্প বলা যায়, যা সত্যি হলেও হতে পারে।
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তখন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। একজন চাষির ছেলে এসেছে বরিশাল থেকে, চাকরির জন্য।
-তুমি কী পারো?
-জি?
-লেখাপড়া করেছ?
-জি না।
-গাড়ি চালাতে পারো?
-জি না।
-রান্নাবান্না করতে পারো?
-জি না।
-ঘাস কাটতে পারো?
-জি না।
-কিছুই পারো না?
-জি না।
-তাহলে তোমাকে আর কী চাকরি দেব? তোমাকে তো মন্ত্রী বানানো ছাড়া আর কোনো উপায় দেখি না।
৫.
যারা অনেক আশা নিয়ে এই লেখাটা পড়তে এসেছিলেন তাদের জন্য শেষ গল্পটা বলে চলে যাই। হয়তো ভেবেছিলেন অর্থনীতির দুরবস্থা, পেঁয়াজের দর, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর রাজাকার তালিকা কেলেঙ্কারি-এসব নিয়ে জ্বালাময়ী কিছু লেখা পড়বেন। তাদের হতাশাটা না হয় তুলনা করি এভাবে-
তিনি খুব বক্সিং দেখতে পছন্দ করেন। মাইক টাইসন তখন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। খেতাবের লড়াই। টেলিভিশনে সরাসরি দেখাবে। বহুমূল্যের টিকিট কিনে স্টেডিয়ামও ভর্তি করে ফেলেছেন সবাই। তিনি আয়োজন করে টিভির সামনে বসলেন। বউকে বললেন ব্যাপক খাবার-দাবারের আয়োজন করতে। সবকিছু রেডি করে বক্সিং দেখতে বসলেন তিনি।
কিন্তু খেলা শেষ হয়ে গেল তিন মিনিটেই। টাইসনের এক ঘুষি খেয়েই প্রতিপক্ষ নকআউট, মাত্র তিন মিনিটে।
খুব মন খারাপ করে তিনি বউকে বললেন, ‘এটা কোনো কথা হলো? আমি খুবই হতাশ, মাত্র তিন মিনিটে সব শেষ? তাহলে এত আয়োজন কেন?’
এবার তাঁর বউ বলল, ‘তাহলে বোঝো আমার কেমন লাগে!’
Comments
ভাই, ৩ মিনিট কোন টেন্স