Reading Time: 4 minutes
আমার অন্যতম প্রিয় পরিচালক কোরিয়ার কিম কি-দুক। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে আজ তিনি মারা গেলেন। তার পরিচালিত কিছু সিনেমা সিনেমা নিয়ে ব্লগে লিখেছিলাম বেশ আগে। কিম কি-দুক প্রথম সিনেমাটি বানান ১৯৯৬ সালে। কিম কি-দুকের ছবির বড় বিশেষত্ব হচ্ছে কম সংলাপ। সংলাপ কম রেখেও যে অনেক কিছু বলা যায় তা পাওয়া যায় কিম কি দুকের সিনেমা থেকে।
আমার পছন্দের কিম কি-দুক:
১. স্প্রিং, সামার, ফল, উইনটার………অ্যান্ড স্প্রিং : এটা নিয়ে আগেও লিখেছিলাম। ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটা দেখে আমি অভিভূত। কেন এর আগে দেখলাম না সেটা নিয়ে চরম আফসুস হল। কিম কি-দুকের ছবিতে সবসময় সংলাপ কম থাকে। এটিও ব্যতিক্রম না। সংলাপ কম, হাতে গোনা কয়েকটি চরিত্র আর একটাই লোকেশন। এই ছবি আমার মাথা থেকে নামবে না। আমি এতোটাই মুগ্ধ যে, আমি খুঁজে খুঁজে দুটো ডিভিডি কিনেছি।
লেকের মধ্যে একটা বাসা। সেখানে থাকে একজন বয়স্ক বৌদ্ধ ভিক্ষু, আরেকটি ছোট ছেলে। সেও দীক্ষা নিচ্ছে। সরল অর্থে বলা যায়, ভিক্ষুদের জীবনের ৫ অধ্যায় দেখানো হয়েছে ছবিটি। কিন্তু আদতে এটি মানুষেরই জীবনচক্র, ৫ ঋতুর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। আবার একটা মানুষের খুশী, রাগ, দু:খ ও আনন্দের এক একটি অধ্যায় পুরো সিনেমা জুড়ে।
২. থ্রি-আয়রন : ঠিক যেন একটা পেইন্টিং। সংলাপ নেই বললেই চলে। পুরো সিনেমায় প্রধান দুই চরিত্রের মধ্যে কথা মাত্র একটি। আবার শেষ সেই কথা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। এই সিনেমার শেষ কি হলো এই ব্যাখ্যা ভাবতে ভাবতেই বাকিটা সময় চলে যাবে।
ছেলেটি দিনের বেলা অভিনব উপায়ে খালি বাড়ি খুঁজে বের করে রাতে সেখানে থাকে। বাড়ির মালিক ফেরার আগেই চলে যায় বাড়ি থেকে। এরকমএক বাড়িতে হঠাৎ দেখা মেলে একটি মেয়ের। তারপর ঘটনা এগিয়ে যায়। অসাধারণ এক সিনেমা।
৩. দি বো: ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। ৬ বছর বয়সী একটি মেয়েকে কুড়িয়ে পেয়েছিল। এখন অপেক্ষা করছে ১৭ বছর হওয়ার জন্য। তারপর বিয়ে করবে। ওরা থাকে একটি মাছ ধরার জাহাজে। সেখানে অর্থের বিনিময়ে মাছ ধরতে আসে অনেকেই। মেয়েটি আবার অভিনব উপায়ে ভাগ্য গণনা করতে পারে।
ঘটনা পাল্টে যায় মাছ ধরতে অল্প বয়সী একটি ছেলে আসলে। ছবির শেষটা বিষ্ময়কর ভাবে অন্যরকম।
৪. ব্যাড গাই: ছেলেটি মেয়েটিকে জোড় করে চুমু খায়। মেয়েটি ছেলেটির মুখে থুথু মারে। ছেলেটি প্রতিশোধ নেয় নির্মম ভাবে। ফাঁদে ফেলে। মেয়েটি বাধ্য হয় পতিতাবৃত্তি করতে। তারপর অদ্ভুদ এক সম্পর্ক তৈরি হয় দুজনের মধ্যে।
সিনেমাটি একদমই অন্যরকম। প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে গল্পটা সাজানো হয়েছে। ভালবাসা, আনন্দ, বেদনা, ক্রোধ সবই আছে।
৪. টাইম: মেয়েটি দেখতে তেমন সুন্দর না। তার ভয় বন্ধুটি বেশিদিন তাকে পছন্দ করবে না, অন্য মেয়েকে চাইবে। তারপর সে ছেলে বন্ধুটিকে না জানিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহাড়া পালটিয়ে ফেলে। মেয়েটির সঙ্গে আবার সম্পর্ক হয় ছেলেটির, যদিও জানে না এ তারই সেই হারানো বান্ধবী।
কিন্তু ছেলেটি ভুলতে পারে না কম সুন্দর চেহারার মেয়েটিকে। ফলে মেয়েটি আবার চেহারা পালটায়। এর মধ্যে ছেলেটিও পালটায়। ফলে কেউ কাউকে আর চেনে না। অসাধারণ এক পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর বাইরেও তার প্রতিটি সিনেমাই দেখার মতো। ওয়াইল্ড এনিম্যাল তার প্রথম দিককার সিনেমা। প্যারিসের পটভূমিতে। দুই বন্ধুর কাহিনী। গ্যাংস্টার দলে ভিড়লে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে।
বার্ডকেজ ইন আরেকটি ছবি। পরিবারটি একটি রিসোর্ট চালায়, সেখানে একজন পতিতাও থাকে অতিথিদের জন্য। বাড়ির মেয়েটি আবার তা পছন্দ করতে পারে না।
দি আইল দুর্বল চিত্তদের জন্য না। কানে ছবিটি প্রদর্শনীর সময় অনেক দর্শক হল ছেড়ে বের হয়ে গেছিলেন।
সামারিটান গার্ল দুই বান্ধবীর ছবি। যারা ইউরোপে যাওয়ার জন্য পতিতাবৃত্তি বেছে নেয়। কিন্তু এক বান্ধবী মারা গেলে নানা সংকট তৈরি হয়।
কোস্ট গার্ড একটু ভিন্ন ধারার ছবি। ব্রেথ অবশ্য কিম কি দুক ঘরানার। পিয়েতা দুর্বল চিত্তদের না দেখাই ভাল। যথেষ্ট পরিমাণে এডাল্ট কন্টেন্ট আছে। ভেনিস উৎসবে গোল্ডেন লায়ন পাওয়া ছবি।